আমি বাঙালি। দিল্লিতে বড় হয়ে ওঠায় স্কুলে বাংলা পড়া হয়নি। যেটুকু শেখা বাবা মায়ের কাছ থেকে, মুখে মুখে। আগে কখনও বাংলায় লিখিনি। বাংলা পড়তে হয় হোঁচট খেয়ে। তবু কী শখ - বাংলা মে লিখেগা। আমি ঘুরতে ভালোবাসি। তাই ঘোরাঘুরি নিয়ে বাংলায় লেখার চেষ্টা করছি। লোক-হাসানোর ব্যপার। তবু নিজের শখের কথা নিজের ভাষায় লিখছি। নিজের ব্লগে নিজেকে বাংলা শেখানো। বেশ মজা !
মানালি শহরটা আমার খুব প্রিয়। গত তিন বছরে, দুটি শরতের ছুটি এইখানে এবং এর আশেপাশে কাটিয়েছি । এই নিয়ে তৃতীয় বার এলাম।
শহর জুড়ে দেবদারু গাছ আর বিয়াস (যাকে বিপাশা বলেও আমরা জানি) নদীর ছোট ছোট tributaries বয়ে যাছে। ওপরে ঝকঝকে নীল আকাশ, নিচে স্ফটিক স্বচ্ছ নীল জল।
আমরা এইবার উঠেছি নেগীজির গেস্ট হাউস "Apple County" তে। ভারি লোভনীয় লোকেশন এই বাড়িটার। গেট দিয়ে ঢুকেই লম্বা commonকরিডোর , সেখানে বেতের সোফা আর টি টেবিল রাখা।তার সামনে বাগান , চার কর্নারে চারটি আপেলর গাছ আর বাগান জুড়ে বিভিন্ন সিজনাল ফুল আর গোলাপ। তবে ঢুকেই যেই দৃশ্য দেখে আমায় বাদে সবাই surprised হয়েছে সেটি হল গাছ ভরা আপেল।আমি ছবিতে আগে দেখেছিলাম কারণ নেগীজি প্রায়ই আমায় তার গ্রামের ছবি Whatsapp করেন।
এই শহরকে মানাল্সু নদী দুটো ভাগে ভাগ করেছে ; Old and New মানালি। কুল্লুর থেকে যখন মানালি আসি আগে নিউ মানালি পড়ে। সেখানেই বাস স্ট্যান্ড, ম্যালরোড এবং অধিকাংশ হোটেলগুলো located।ম্যালরোড ছাড়িয়ে উত্তর দিকে হাঁটলে Doongri Forest আর একটু এগিয়ে নদী পার করলে ওল্ড মানালি।
মানালি বলতে আমি ওল্ড মানালির চার্ম বুঝি। নিরিবিলি কিছু গ্রাম নিয়ে এই জায়গা, পাহাড়ের গায়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের বাড়ি আর নিচে মানাল্সু নদী।অবশ্য ইদানীং এখানে দেখা দিচ্ছে Israeli টুরিস্টদের উৎপাত। কসলের পর ওদের কাছে মানলি preferred । এখানে মিনি ইসরায়েল গড়ে উঠতে আর বেশি সময়ে লাগবে না ।
ইসরায়েলি ছাড়া আসে কিছু Korean এবং European টুরিস্ট। প্রথম বার মানালি এসে আমি ছিলাম রহেবেত রামজির বাড়িতে। তার খোঁজinternetয়ে পাই। এক সাহেব তার কদর নিজের ব্লগে করেছে, তার experience পড়ে আমি রহেবেতজির সঙ্গে যোগাযোগ করি ওনার গেস্ট হাউস Apple Orchardএ থাকার জন্য ।
রহেবেতজির গেস্ট হাউসে Indian টুরিস্ট খুব কম দেখা যায়। তবে ইউরোপিয়ানদের কাছে এই সম্পত্তির হাই ডিমান্ড।ওরা মাস তিন চারেক উপভোগ করেই দেশে ফেরে। কেউ কেউ আবার বছর খানেকও থাকে। একবার এক ফরেনার ক্লায়েন্ট বিলিং থেকে parasailing করে গুলাবা পৌঁছেছিলেন, তারপর মাস খানেক ওনার বাড়িতে আস্তানা নেন । ভদ্রলোকের বয়েস নাকি প্রায় পঞ্চাশের ওপর।
শহরের বাইরে বিয়াসের তীরে আরও কিছু গ্রাম রযেছে, তবে তারাও এখন মানালির নামেই পরিচিত। যেমন জাগাত্সুখ,প্রিনি, বশিষ্ঠ। এই সব অঞ্চলে ইদানীং কালে ছোট ছোট অনেক homestays গড়ে উঠছে।তাদের তথ্য সরকার ইন্টারনেটে হিমাচল হোমস্টে নামের ওয়েবসাইটে প্রচার করে ।
ওল্ড মানালিতে দুটো প্রাচীন মন্দির আছে; হিড়িম্বার আর মনু ঋষির। হিড়িম্বা দেবী হলেন মানলির ঈশ্বর , গোটা কুল্লু জেলা জুড়ে দেবী আর তার পুত্র ঘটোৎকচের ভক্ত আছে । কুল্লুর এক গুরুত্বপূর্ণ উৎসব দশেরাতে দেবীর মূর্তি মানালির পাঁচশো বছরের পুরাতন মন্দির থেকে রথে করে আনা হয়ে ধালপুরে ।ঢাক ঢোল সানাই কাঁসরের শব্দে দেবীর আগমন হয় ধালপুর মাঠে। ওই রথকে অনুসরণ করে ঢোকে রঘু বংশের রাজা রামের রথ। সাত দিনের এই পার্বণে জেলার ছোট বড় প্রতিটি মন্দির থেকে রথে করে মানুষের কাঁধে চেপে আসে দেবী দেবতারা।দূরের গ্রাম গুলোর থেকে যাত্রা শুরু হয় প্রায় সপ্তাহ খানেক আগে।
এই জেলয়ে দেবদারু গাছেরা সম্মানে ঈশ্বরের থেকে কম নায় ।এখানে গাছ কাটা আর মানুষ খুন করার দন্ড এক। দুঙরি ফরেস্টের অনেক গাছ ৩০০ বা ৪০০ বছরের পুরনো হবে।এই গাছের বয়েস তার উচ্চতা দেখে বলা যায় । বলা যেতে পারে শহরের অস্তিত্ব অসংখ্য দেবদারুরা মিলে ধরে রেখেছে, নইলে এত দিনে পাহাড়ের মাটি ক্ষয়ে যেত।
গোটা মানালি জুড়ে বহু বেকারি। Club houseএর পাশে একটি রেঁস্তোরা চালায় এক Tibetan ভদ্রলোক এবং তার স্ত্রী। তাদের দোকানের নাম জার্মান বেকারি। কে জানে নামটা টিবেটান দিল না কেন ?
ওখানে গেলে আমি পিজা অর্ডার দিই।যেমন thin crust তেমন তার স্বাদ আর সঙ্গে নদীর মিষ্টি বয়ে চলার আওয়াজ ।
কুল্লুতে অগাস্ট থেকে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ হল আপেল আর জাপানি ফলের (persimmon) সময়। মানালি যাবার পথে এদের প্রচুর বাগান দেখা যায়। লাল,হলুদ, কমলা,সোনালী কত রঙের ফল গাছে ঝোলে। আবার কিছু গাছের ফল বড় নেট দিয়ে বেঁধে রাখে পাখি ও কাঠবেড়ালির উপদ্রবের ভয়ে ।
No comments:
Post a Comment